নিউজ এশিয়া২৪ ডেস্ক: এক সময় যাদের থাকার মতো জায়গা বলতে ছিলো অস্থায়ী জোড়াতালির ঘর, আজ তাদের নিজের ভূমি, নিজের ঘর, নিজের একটি ঠিকানা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে যাদের অজানা আতঙ্কে দিন কাটতো, তারা এখন নিশ্চিন্তে আশ্রয়ণের বাড়িতে সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন দেখে।
এমন একজন মিনজু বেগম। বয়স ১৮। দেশব্যাপী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আওয়ামী লীগ সরকার ঘর দেওয়ার যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেখানে তিনিও ভোলার চরফ্যাশন এলাকার চর কচ্ছপিয়াতে একটি ঘর পেয়েছেন। সেখানে স্বামী, শাশুড়ি আর সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন তিনি।
নিকট অতীতের কষ্টের দিনের কথা বলতে গিয়ে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিনজু। জানান, ভাঙা একটি ঘরে পরিবারের অনেক মানুষ নিয়ে বাস করতেন। ছোট্ট ঘরে ঠিকমতো থাকা যেতো না। তার ওপর পুরোনো টিন আর পলিথিনের জোড়াতালির ঘর ঝড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়তেন।
সেই তুলনায় এখন অনেক ভালো আছেন জানিয়ে এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। নিমজু বলেন, এটা তাদের কাছে শুধু আশ্রয় নয়, একটি ঠিকানা নয়, এটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটি উপহার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় মঙ্গলবার (১১ জুন) সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করবেন।
সকাল ১১টায় নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করবেন।
চরফ্যাশন উপজেলার কচ্ছপিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেকজন সুবিধাভোগী রাজিয়া বেগম। চার সন্তান আর স্বামী নিয়ে যে কষ্টের যাত্রা এতদিন অতিবাহিত করে এসেছেন, তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে আশ্রয়ণে ঘর পাওয়ার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আগে যেখানে থাকতাম সেটি নিজের ছিলো না। কোনো রকমে একটি ঘর তুলে সেখানে দিন কাটিয়েছি। খুব খারাপ পরিবেশ ছিলো। এখন ভালো পরিবেশে স্বপ্ন দেখি সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার।
ভোলা জেলা প্রশাসক ( ডিসি) আরিফুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে ঘর প্রদান করবেন। ইতিমধ্যে ভোলা সদর উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিঃস্ব, অসহায় মানুষকে যাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুর্নবাসন করা যায়, একই সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে মূল উদ্দেশ্য, আমাদের সামাজিক সুরক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য, সেগুলো কিন্তু এই প্রকল্পের যারা উপকার ভোগে রয়েছেন, তাদেরকে সরকার নিশ্চিত করছে।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি যেখানে করা হয়েছে, সেখানে কিন্তু একটি সুন্দর মানসম্পন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের যে সন্তান রয়েছে, সেসব সন্তান যাতে আগামীর উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য যাতে যথাযথভাবে শিক্ষা পায় সেই বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করবেন। নতুন ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৮টি এবং উপজেলা হবে ৪৬৪টি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন।
প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জেলায় এর আগে গৃহ ও ভূমিহীনদের মধ্যে মোট ৪ হাজার ৬৬৬টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আরও ২৬১টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই ২৬১টি বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে গৃহ ও ভূমিহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
শাহিন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প জেলার গৃহ ও ভূমিহীন মানুষকে শুধু আশ্রয়ই দেয় না, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছিলেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন (একটি পরিবারে ৫ জন ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।