রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী মহানগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই, মাদক সেবন ও বিক্রিসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করছে। এতে অতিষ্ঠ নগরবাসী।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন রাসিকের কতিপয় কাউন্সিলর। ২ বছর আগে মহানগরীতে ৫ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু নিয়মিত নজরদারির অভাবে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং সদস্যের সংখ্যা আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। আগে নগরীতে পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য ছিল। এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। নতুন কোনো গ্রুপ তৈরি হচ্ছে কিনা পুলিশ সেদিকে নজর রাখছে।
পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাং সদস্যদের অনেকেই এসেছে সচ্ছল পরিবার থেকে। তাদের সঙ্গে জোট বাঁধছে নগরীর বস্তির কিশোর যুবকরা। এদের অনেকেরই দামি মোটরসাইকেল রয়েছে।
আরও পড়ুন>>ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে লাখ টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ২
সন্ধ্যা নামলেই তারা তিনজন করে মোটরসাইকেলে উঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীতে । পথে কোনো পথচারী বা অটোরিকশা যাত্রীর ব্যাগ দেখলেই তারা টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে এমন ২৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি নগরীর শাহ মখদুম থানার গাংপাড়ায় প্রতিপক্ষের আরাফাত হোসেন নামে এক কিশোরকে মারধরের পর অস্ত্র উঁচিয়ে নৃত্য করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে চাইনিজ কুড়াল, ধারাল ছুরি, রাম-দা ও অন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নৃত্য করছে।
পরে পুলিশ তাদের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার এসব কিশোর গ্যাং সদস্য রাসিকের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন>>পাকিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে ধোঁয়াশা
জানা গেছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় নানা নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এর মধ্যে রয়েছে, ‘টেন স্টার বয়’, ‘রাইজিং বয়’, ‘অদম্য বালক’। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যের অনেকে সারা দিন ঘুমায়, রাত হলেই নানা অপরাধে জড়ায়।
২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বাগমারার দুই কলেজ ছাত্র কৌশিক ও অভিজিৎ। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে উভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কৌশিকের বুকে ৫০টি এবং অভিজিতের বুকে ৩০টি সেলাই দিতে হয়েছে।
আরও পড়ুন>>রাজশাহী রেল স্টেশনে যুবকের ঘুসিতে আনসার সদস্য নিহত
১৭ সেপ্টেম্বর ভোরে নগরীর রাজারহাতা এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীর আঘাতে রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নিশাদ আকরাম গুরুতর আহত হন। ১৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩ অক্টোবর তিনি মারা যান।
গত বছরের ৭ এপ্রিল ছিনতাই করে পালানোর সময় অনিক (১৯) নামে এক কিশোর গ্যাং সদস্য নগরীর ডাবতলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় তার আরেক সহযোগী মারুফ হোসেন (১৮) মারাত্মক আহত হয়।
Follow