নিউজ এশিয়া২৪ ডেস্ক: চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আগেই যৌতুকের বলি হয়েছেন রিমা আকতার (২০) নামের এক তরুণী। হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে ক্রমাগত যৌতুকের দাবির প্রতিবাদে বিয়ের দুদিন আগে আত্মহত্যা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে উপজেলার হাইদগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রিমা ওই এলাকার হীরা তালুকদার বাড়ির মনির আহমদের মেয়ে। এদিন রাতেই মেহেদী অনুষ্ঠান ছিলো রিমা আকতারের।
শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। হলুদ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মহত্যা করেন এই তরুণী। আত্মহত্যা করার পূর্বে লিখে গেছেন একটি চিরকুট। সেখানে লিখে গেছেন তার না বলা কথা।
সুইসাইড নোটে রিমা লিখে গেছেন- ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছো এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছো। আমি পারছি না এতো যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না, ভালো থেকো। আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবারের কাছ থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মানওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্টমর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ো।’
চিরকুটের শেষে রিমা আরও লিখে গেছেন- ‘আর আমার পরিবারকে বলছি, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’
আরও পড়ুন>>নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোলপ্লাজায় ট্রাক, টোল আদায়কারী নিহত
রিমার পরিবারের সদস্যদের কাছে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের হীরা গাজী তালুকদারের বাড়িতে ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টায় বৈদ্যুতিক ফ্যানের সাথে রশি বেঁধে ঝুলে পড়েন রিমা।
দীর্ঘক্ষণ রিমার ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে স্বজনরা তাকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখতে পান রিমা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।
তৎক্ষণাৎ রশি কেটে তাকে নামিয়ে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিমা বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা যান। রিমা পটিয়া সরকারি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
আরও পড়ুুন>>সাংবাদিক রিজুর উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন (ভিডিওসহ)
রিমার হবু স্বামী মিজানুর রহমান মোরশেদ একজন ব্যাংকার। তিনি আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে চাকরি করেন। রিমা ও মোরশেদ দুজন একই এলাকার। তাদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কও চলছিল।
রিমার ছোট চাচা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে একই এলাকার ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে রিমার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এ নিয়ে আমরা উভয় পরিবার ছেলেমেয়ের সম্পর্ক জেনে পারিবারিকভাবেই শুক্রবার (২৮ জুন) বিয়ের তারিখ ঠিক করি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে হওয়ার কথা ছিল তাদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রিমা ও মোরশেদ মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলছিল। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সাথে রশিতে ঝুলে পড়ে রিমা।’
আরও পড়ুন>>শৈলকুপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
রিমার বাবা মনির আহমদ ঘটনার জন্য হবু স্বামী মোরশেদকে দায়ী করে তার শাস্তি চেয়ে বলেন, ‘তার লোভের বলি হয়েছে আমার আদরের মেয়ে তারা বরযাত্রীর পরিবর্তে টাকা চেয়েছে, তাতেও আমরা রাজি হয়েছি।
তারা কোনো কিছু (যৌতুক) দাবি নেই বলে আসলেও বিয়ের কয়েকদিন আগ থেকে একের পর এক যৌতুক দাবি করে আসছিল। আমি তার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এবং সরকারের কাছে এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।’
রিমার ভাই আজগর হোসেন বলেন, ‘বিয়েতে বরযাত্রী খাওয়া-দাওয়া বাবদ মোরশেদের পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
তারপরও আমার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ এবং বিয়ের খরচ হিসেবে আরও নগদ টাকা দাবি করে। উভয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যৌতুক দাবি করার অপমান সইতে না পেরে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তারা যে এতটা যৌতুক লোভী হবে তা আমাদের জানা ছিল না। নিজের প্রাণ দিয়ে আমার বোন তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়ে গেছেন।’
+ There are no comments
Add yours