শিরোনাম

পরিবারের সদস্যদের তুলনায় গরিব মতিউর!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচনায় আসার পর বেরিয়ে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতির তথ্য। অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন হাজার কোটির সম্পদ। তবে এসব অর্থ তিনি নিজের নামে রাখেননি। নিজের অবৈধ আয় আড়াল করতে এসব সম্পদ করেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে।

মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এই পক্ষে দুই সন্তান রয়েছে মতিউরের। এদের মধ্যে মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা কানাডা প্রবাসী। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্নব যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে বিয়ে করেছেন চট্টগ্রামের এক ঋণখেলাপি শিল্পপতির মেয়ে।

দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী গৃহিণী। তাঁর মেয়ে ইফতিমা রহমান মাধবী বারডেম মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। আর ছাগলকাণ্ডের জন্ম দেওয়া ছেলে মুশফিকুর রহমান নটর ডেম কলেজের ছাত্র। ছোট ছেলে ইরফানের বয়স সাত বছর। এছাড়া মতিউরের এক ভাই নূরুল হুদা ছিলেন বেকার, বখাটে। আরেক ভাই কাইয়ুম হাওলাদার গার্মেন্টে চাকরি করতেন। বাবা আব্দুল হাকিম ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

অত্যন্ত সাধারণ পারিবারিক পরিচয়ের এ ব্যক্তিরাই এখন শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তাদের নামে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট, পার্ক, রিসোর্ট, শিল্পকারখানা-কী নেই। কারও নামে পুঁজিবাজারে আছে বিপুল বিনিয়োগ। অভিযোগ আছে, অতি ধূর্ত মতিউর নিজের অবৈধ আয় আড়াল করতে কাগজে-কলমে পরিবারের সবাইকে সম্পদশালী করে দিয়েছেন। নিজের নামে রেখেছেন সামান্য কিছু। যাতে আইনের ফাঁকফোকরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন।

আয়কর ফাইলের তথ্য বলছে, মাত্র ২০ কোটি টাকার মালিক মতিউর। এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা আছে নগদ। পুঁজিবাজারে মাত্র ৮২ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য উল্লেখ করেছেন সবশেষ আয়কর নথিতে। হাতে নগদ আছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ৩ কোটি টাকার অকৃষি সম্পত্তি এবং একটি মৎস্য খামারকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া আছে তার। আয়কর ফাইলের তথ্য নেওয়ার সময় এক কর্মকর্তা হাসির ছলে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের তুলনায় স্যার অত্যন্ত গরিব।’

মতিউরের গাড়ি-বাড়ি সবই তার স্ত্রী-সন্তান এবং আত্মীয় এবং তাদের নামে থাকা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে। তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মতিউর, দুই স্ত্রী ও দুই পক্ষের দুই সন্তান মিলে অন্তত এক ডজন বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৩/৪ কোটি টাকা দামের গাড়িও আছে। তবে একটি গাড়িও তাদের নামে নেই। এমনকি রিফাতের ব্যবহার করা প্রাডো ও প্রিমিও মডেলের যে ৪টি গাড়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেগুলো তাদের নামে নেই।

আরও পড়ুন:

মতিউর যে বাড়িতে বসবাস করেন সেই বাড়িও কাগজে কলমে তাঁর মেয়ে ইপ্সিতার নামে রয়েছে। ছোট স্ত্রীর নামে ধানমন্ডিতে একটি, লালমাটিয়ায় একটি, কাকরাইলে দুটিসহ আরও বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন মতিউর। তার নামে পুঁজিবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। অথচ গৃহিণী স্ত্রী শাম্মী আখতারের আয়ের কোনো উৎস নেই।

পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে এসকে থ্রেড নামে সুতা তৈরির কারখানা আর টঙ্গীতে এসকে ট্রিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের গার্মেন্ট সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন মতিউর। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছোট ভাই কাইয়ুম হাওলাদার। অথচ একসময় তিনি নিজেই গার্মেন্টে চাকরি করতেন। এছাড়াও প্রথম পক্ষের স্ত্রী, কন্যা ও ছেলের নামে ওয়ান্ডার পার্ক, পূবাইল শুটিং স্পট ও রিসোর্ট, খামারসহ বিপুল সম্পদ করেছেন।

google-news-channel-newsasia24

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *