শিরোনাম
Khan Brothers got 'Aladdin's Cherag'-newsasia24

‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছে খান ব্রাদার্স

নিউজ এশিয়া২৪ ডেস্ক: ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত সপ্তাহে এক প্রকার ধস হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এক সপ্তাহেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা নেই হয়ে গেছে। এমন ধসের বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়ে গেছে ৭১০ কোটি টাকার ওপরে।

Khan Brothers got 'Aladdin's Cherag'-newsasia24

অবশ্য শুধু গত সপ্তাহ নয়, প্রায় ৯ মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে কয়েক দফায় সতর্ক বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদনও তৈরি করেছ ডিএসই।

সেই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। এ পরিস্থিতিতেও খান ব্রাদার্সের শেয়ারের দাম বাড়ার পাগলা ঘোড়া থামছে না। যেন রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’- কেও হার মানাচ্ছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। নয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় দুই হাজার শতাংশ।

আরও পড়ুন>>শেয়ারবাজারে ফের দরপতন; হারিয়েছে কোটি টাকা মূলধন

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের আর্থিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। লোকসানের কারণে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এমন একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় দুই হাজার শতংশ বেড়ে যাওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। কোনো বিশেষ চক্র পরিকল্পিতভাবে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, খান ব্রদার্সের দাম বাড়ার চিত্র দেখলে খুব সহজেই বোঝা যায় কোনো বিশেষ গোষ্ঠী এই দাম বাড়ানোর পেছনে রয়েছে। এই গোষ্ঠী নিজেরা নিজেরাই লেনদেন করে শেয়ারের দাম বাড়াতে পারে। এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত।

আরও পড়ুুন>>দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজতে জরুরি সভায় বসেছেন মন্ত্রীরা

নানান পক্ষের কঠোর সমালোচনার মধ্যে প্রায় দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে সপ্তাহজুড়ে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৮টির।

এমন পতনের বাজারেও গত সপ্তাহে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭২ টাকা ৪০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭১০ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২১৮ টাকা ৩০ পয়সা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে যা ছিল ১৪৫ টাকা ৯০ পয়সা।

আরও পড়ুন>>ফেসবুকে সুন্দরীর ফাঁদে সর্বস্বান্ত যুবক

শুধু গত সপ্তাহ নয়, গত বছরের ৩০ এপ্রিলের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত বছরের ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা ৪০ পয়সা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম ২১৮ টাকা ৩০ পয়সায় উঠেছে। অর্থাৎ নয় মাসের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২০৭ টাকা ৯০ পয়সা বা এক হাজার ৯৯৯ শতাংশ।

যদি কোনো বিনিয়োগকারী গত ৪ এপ্রিল খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনেন, তাহলে এখন তার বাজারমূল্য ২ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭ টাকা। এ হিসাবে ১০ লাখ টাকা খাটিয়ে নয় মাসেই মুনাফা পাওয়া গেছে ২ কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন>>যে কারনে সারা বাংলাদেশে লোডশেডিং

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২১ সালে কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। তবে ২০২০ ও ২০১৮ সালে ২ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারেীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ারপ্রতি এক পয়সা লোকসান করেছে।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬৪ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

আরও পড়ুন>>করোনার নতুন ধরন, টিকা নেওয়ার নির্দেশ

কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য চলতি বছরের ১৩, ১৬ ও ২৪ জানুয়ারি ডিএসই থেকে নোটিশ পাঠানো হয়।

খান ব্রাদার্সের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘খান ব্রদার্সের শেয়ারের দাম বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করতে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি নিয়ে এখন কাজ করছে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ।’

যোগাযোগ করা হলে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই যতগুলো নোটিশ দিয়েছে আমরা সবগুলোর জবাব দিয়েছি। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারির নোটিশেরও জবাব দিয়েছি। আমরা প্রতিবারই জানিয়েছি কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।’

আরও পড়ুুুুুুুন>>৫ ধাপেই করে ফেলুন সর্বজনীন পেনশনের আবেদন

আপনাদের কোম্পানির শেয়ারের দাম কি স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে না। কিন্তু এখানে আমাদের বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। যদি কোনো বিনিয়োগকারী আমার ১০ টাকার শেয়ার দুইশ টাকার ওপরে কেনে সেখানে আমার কী করার আছে? আমার কিছু করার নেই। কাউকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যদি কেউ কিনিয়ে থাকে, এটার জন্য আমরা দায়ী না। আমাদের কোনো নতুন প্রজেক্ট আছে বা এ ধরনের কোনো কিছু আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রচার করিনি। এমনকি সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনেও আমরা লোকসানের তথ্য তুলে ধরেছি। সেখানেও ভালো কিছু নেই।’

google-news-channel-newsasia24

Follow

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *