শিরোনাম
education-board-newsasia24

নতুন শিক্ষাক্রমে ‘ত্রিভুজ’ পাওয়ার প্রতিযোগিতা

ফাহিম শাওন: নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে সরকার। শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ শিক্ষার্থীদের উপর থেকে চাপ কমানো। অন্যদিকে জিপিএ-৫ পাওয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

এর মূল উদ্দেশ্য হাতে-কলমে শিক্ষা। তাদের কাজ শিখতে হবে, কাজ জানতে হবে। কিন্তু বছর শেষে তার পুরোটায় উল্টো দেখছেন অভিভাবকরা। বরং শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ এর বদলে ‍”ত্রিভুজ” পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা করছেন শিক্ষার্থীরা। বছরের শেষে হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। আর সেই মূল্যায়ন কিভাবে করতে হবে ৫ নভেম্বর তার নির্দেশনা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

ntrca-newsasia24 2

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ হবে নতুন শিক্ষাক্রমের পারদর্শিতার সূচক (পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) অনুযায়ী। শিক্ষকরা সূচক ধরে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করবেন। সেই অনুযায়ী ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ চিহ্ন দেবেন শিক্ষকরা। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি করে বিষয়। সেগুলো হলো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। সবগুলো বিষয়েই চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।

আরও পড়ুন: সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা আগামী ১ ডিসেম্বর

নির্দেশিকার ‘শ্রেণি উন্নয়ন নীতিমালা’ অংশের তথ্যানুযায়ী— একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হলে তাকে দুটি বিষয়ে পারদর্শি হতে হবে। প্রথমত শিক্ষার্থীর স্কুলে উপস্থিতির হার এবং দ্বিতীয়ত বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা। কোন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত হিসেবে ধরা হবে যদি তার ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি থাকে। তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে।

দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয় হলো পারদর্শিতার নির্দেশকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা। সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে সবগুলো পারদর্শিতার নির্দেশকে কোনো শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা যদি “ত্রিভুজ” স্তরে থাকে তাহলে তাকে পরবর্তি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে। অন্যদিকে যদি ‘চতুর্ভুজ’ স্তরে থাকে, তবে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা হবে না।

মূল্যায়ন নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, শুধু মাত্র উপস্থিতি হারের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না। তবে পারদর্শিতায় বিবেচনায় হলে শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের ভার শিক্ষকদের উপর ন্যাস্ত থাকবে।

ntrca-newsasia24

কেউ একই ক্লাসে থেকে গেলে তাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আত্মউন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষক সহযোগিতা করবেন। আর এক বা একাধিক বিষয়ে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরের ক্লাসে উঠে যাওয়া শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের শিখন উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যদিকে পরের ক্লাসে উঠতে না পারা শিক্ষার্থীরাও বছর শেষে তার পারদর্শিতার ভিত্তিতে ট্রান্সক্রিপ্ট পাবে।

কী করলে ত্রিভুজ, কী করলে চতুর্ভুজ

শিক্ষার্থী কী করলে ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজের মধ্যে একটি ইনডিকেটর পাবে, তা জানতে স্কুলে পাঠানো টুলস বা নির্দেশিকা পর্যালোচনা করা হয়। অধ্যায় অনুযায়ী কাজ ও শেখার ধরন ভিন্ন। যেমন—ষষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বিষয়ের ৭ নম্বর অধ্যায়ে রয়েছে স্কিল কোর্স। এ অধ্যায়ে পারদর্শিতার সূচক ৬.৭.১-সঠিকভাবে ভাত রান্না করতে পারা এবং বাড়িতে নিয়মিত ভাত রান্নার অনুশীলন। এ সূচক অনুযায়ী পারদর্শিতার মাত্রায় বলা হয়েছে, যদি কোনো শিক্ষার্থী ‘ভাত রান্নায় আংশিক দক্ষতা অর্জন করে এবং কদাচিৎ বাড়িতে ভাত রান্নার অনুশীলন করে’ তখন তাকে চতুর্ভুজ দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।

কেউ যদি ‘পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, নিরাপত্তা মেনে ভাত রান্না করতে পারে এবং বাড়িতে মাঝে মধ্যে অনুশীলন করে’ তাহলে তাকে বৃত্ত চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। আবার কেউ যদি ‘পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, নিরাপত্তা মেনে ভাত রান্না করতে পারে এবং বাড়িতে নিয়মিত অনুশীলন করে’ তখন সে পাবে ত্রিভুজ, যা পারদর্শিতার সূচকের মাত্রায় ‘দক্ষ’ বলে বিবেচিত।

আরও পড়ুন: এমন বইমেলা প্রতিটি স্কুলে হওয়া উচিৎ (ভিডিও)

সপ্তম শ্রেণির গণিত বিষয়ের ৮ নম্বর অভিজ্ঞতার শিরোনাম ‘চলো বৃত্ত চিনি’। এ অধ্যায়ের পারদর্শিতার সূচক ৭.৩ ও ৭.৮। পারদর্শিতার সূচক ৭.৩.১ হলো ক্ষেত্র অনুযায়ী ‘উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিমাপের ফল নির্ণয়’। এ সূচকে পারদর্শিতার মাত্রার ঘরে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো একটি পরিমাপ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফল নির্ণয় করতে পেরেছে’ এমন শিক্ষার্থী চতুর্ভুজ পাবে।

আবার ‘একাধিক পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল নির্ণয় করতে পেরেছে’ এমন শিক্ষার্থীরা বৃত্ত চিহ্নে মূল্যায়িত হবে। আর ‘বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিমাপ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে পারা’ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ‘দক্ষ’ বিবেচিত হবে এবং তাদের ত্রিভুজ চিহ্নে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা।

আরও পড়ুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *