নিউজ এশিয়া২৪ ডেস্ক: কুষ্টিয়ায় প্রমত্তা পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো ভাঙনের কবলে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে জনবসতি, ফসলি জমি, ভবনসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
যদিও ভাঙন রোধে গেল ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনের জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নদী তীরে গ্রোয়েন (বাধ) নির্মাণকে দায়ী করছেন।
তারা বলছেন, সময়মতো কিছু টাকা ব্যয়ে গ্রোয়েনের বিপরীত অংশে প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ করা গেলে সরকারের এই হাজার কোটি টাকার ব্যয় সংকোচন করা যেত; ওই এলাকাতে ভাঙনও হতো না। এসবের দায় দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের।
নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে কোনো নদীরই গতিপথ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে জনস্বার্থে অনেকসময় সেটি করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন>>মুঠোফোনে শেখ হাসিনার সাফল্য বার্তা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা ঘেঁষে প্রবাহিত পদ্মা নদী চার বছর আগে যে প্রবাহ চ্যানেলে ছিল এখন সেখানে নেই।
নদীর বামতীরে গ্রোয়েন (বাধ) নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যে কারণে নদী এখন ডানতীর ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে; গুগল ম্যাপ দেখলেই সেটি স্পষ্ট হওয়া যায়।
নদী বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাউবোর গাফিলতির কারণে এরইমধ্যে ভাঙনের কারণে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন>>বিষাক্ত সাপ দিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা করলো স্বামী!
আবার এটি প্রতিরোধে সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিতে হয়েছে। অথচ, সেই সময়ে পাউবো থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলে এর কোনোটিই হতো না।
জেলা পাউবোর মরফোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা ঘেঁষে প্রবাহিত পদ্মা নদী চার বছর পূর্বে যে প্রবাহ চ্যানেলে ছিল এখন সেখানে নেই। বামতীরে গ্রোয়েন (বাধ) নির্মাণের কারণে নদী এখন ডানতীর ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ রেল সেতু ও লালন শাহ সেতুলাগোয়া ভাটিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের পোর্ট নির্মাণে পদ্মা নদীর বাম তীরে মূল প্রবাহ চ্যানেলের মধ্যে প্রায় ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের গ্রোয়েন (বাঁধ) নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালে।
আরও পড়ুন>>এবার ঈশ্বরদীতে ট্রেনে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
এরপর থেকেই নদীর ডান তীরে ভাঙন শুরু হয়। এভাবে গেল কয়েক বছরে পদ্মা প্রকৃত গতিপথ হারিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমি। এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দায় দিচ্ছেন নদী ও পানি সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এই ভাঙন রোধে গেল ৩১ অক্টোবর একনেকে ‘পদ্মা নদীর ভাঙন হতে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলাধীন তালবাড়িয়া এবং কুমারখালী উপজেলাধীন শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকা রক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পাশ হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতেই নদীর ডান তীরে মাত্র ২ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাধ দিলে সুরক্ষিত থাকতো নদীর গতিপ্রকৃতি। এতে এই জনপদ ঝুঁকিমুক্ত থাকতো, লাঘব হতো সরকারের হাজার কোটি টাকার ব্যয়।
আরও পড়ুন:
- নাটোরে জিএম ট্রাভেলসের ৩টি বাসে আগুন
- ৭ বছরের শিশুকে কুপিয়ে হত্যা
- কুমারখালীতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এর কর্মসূচী
স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘পদ্মা নদীর বাম তীরে রূপপুর বাধ নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা একই সময়ে ডান তীরে সামান্য কিছু প্রতিরক্ষামূলক কাজ করলেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেত ভেড়ামারা-মিরপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ।
দেরিতে হলেও সরকার সমস্যাটি সনাক্ত করে সমাধানে প্রকল্প নিয়েছে। ক্ষতি যা হবার হয়েছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে নতুন করে আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।’