নিজস্ব প্রতিনিধি: কুমিল্লায় ভূমিহীনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক এক গ্রাম।
কুমিল্লার বরুড়ায় ভূমিহীনদের জন্য ৪ একর জায়গার ওপর তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক এক গ্রাম যার নাম বরুড়ার স্বপ্নের আশ্রয়ণ । কিন্তু স্থানীয়রা ভালোবেসে গ্রামটির নাম দিয়েছেন শামীমপুর।
এ গ্রামটি সম্পূর্ণ ইউরোপ ও আমেরিকার গ্রামের আদলে তৈরি করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের বুকে প্রথম স্মার্ট গ্রাম বলে দাবি স্থানীয়দের।
বরুড়া উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝলম ইউনিয়নের চেঙ্গাচাল ও ফরিদপুর গ্রামের পাশে অবস্থান গ্রামটির। প্রতিষ্ঠা করেছেন এসকিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান, শিল্পপতি এজেড এম শফিউদ্দিন শামীম।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত গ্রামটি তৈরিতে ৪ একর জমি কেনেন শিল্পপতি শফিউদ্দিন শামীম। পরে তা ভরাট করা হয় মাটি দিয়ে। দোতলা ফাউন্ডেশন দেওয়া একতলা বিশিষ্ট মোট ৬৫টি ইউনিট করা হয়। প্রতিটি বাসস্থানের আয়তন ১৩৫০ বর্গফুট।
প্রতিটি ইউনিটে ২টি থাকার কক্ষ, ১টি গোসলখানা, ১টি টয়লেট, ১টি রান্নাঘর ও ১টি টিউবওয়েল রয়েছে। যা ছোট একটি পরিবার বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী।
এ ছাড়া এখানে বসবাসকারী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য করা হয়েছে অত্যাধুনিক খেলার মাঠ। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশনের বিশেষ ড্রেনেজ, সেপটিক ট্যাংকিসহ যাবতীয় অত্যাধুনিক সব কিছু। সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে ফুল ও খেজুর গাছ। যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে সবার।
শুধু ইউনিটই নয়। গ্রামটিতে ঠাঁই পাওয়া মানুষদের জন্য গ্রামে ঢোকার মুখেই তৈরি করা হয়েছে দোতলা একটি মার্কেট। মার্কেটটির নিচতলায় করা হয়েছে ১০টি দোকান। ওপরের তলায় কমিউনিটি সেন্টার। গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে এ কমিউনিটি সেন্টার।
গ্রামটির নির্মাণের সকল কাজ শেষ। বৈদ্যুতিক সংযোগ টানানো হয়েছে। শুধু মিটার আর সংযোগ স্থাপন হলেই পরিপূর্ণ হবে গ্রামটি। তবে ইতোমধ্যেই প্রায় ২৫টি পরিবার বুঝে নিয়েছেন তাদের আবাসন।
এখানে ঠাঁই পাওয়া অশ্বদিয়া গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, আমি একটি বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করে সংসার চালাই। বাবার ১ তোলা সম্পত্তি নেই। কয়েক বছর আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হই। পরিবার নিয়ে খুব সমস্যায় ছিলাম। কিন্তু শামীম সাহেবের দয়ার কারণে আমাকেও একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে এমন একটা বিল্ডিংয়ে থাকতে পারব।
পারুল আক্তার বলেন, আমি আজ ১১ বছর ধরে স্বামী পরিত্যক্তা। আমার দুটো সন্তান নিয়ে খুব বিপাকে আছি। থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। আমার মেয়ে খুব মেধাবী। শামীম সাহেব স্কুল থেকে আমার মেয়ের নাম নিয়ে পরে আমাদেরকে একটি ঘর দিয়েছেন এখানে। আমার মেয়ে এখান থেকে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। শামীম সাহেবের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলমগীর বলেন, আপনার কাছে যে গ্রামটির কথা শুনলাম, আমার ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে দেখে আসি। আমি মনে করি যে ব্যক্তি গ্রামটি নির্মাণ করেছেন, তার মতো করে দেশের সকল বিত্তবানদের কোনো না কোনো ভূমিকা রাখা উচিত একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে। শফিউদ্দিন শামীমকে অনেক ধন্যবাদ ।
গ্রামটির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি এজেড এম শফিউদ্দিন শামীম বলেন, আমি দেখেছি অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে আমাদের সমাজে। যারা সঠিক পরিবেশ না থাকায়, আবাসন না থাকায় অল্প বয়সে কর্মজীবনকে বেছে নিচ্ছে। আমি এমন মেধাবীদের ভালো ভবিষতের জন্য প্রকল্পটির পরিকল্পনা শেষ করেছি।
Follow